সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া
ওরা আমার কলিজার টুকরাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে আমার মেয়ের সাথে আমাকে কথা বলতে দেয়নি। মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্যবার অনুরোধ করেছিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন সম্প্রতি বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের লিফটের ভেতরে মৃত অবস্থায় পাওয়া ১৩ বছরের শিশু সাবেকুন নাহারের পিতা মোঃ ইয়াসিন।
“মায়ের মৃত্যুর পর গত প্রায় দেড় বছর আগে মেয়েকে বান্দরবানের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুসের ছেলের বাসায় গৃহের কাজ করতে দিই” বলেন তিনি।
“গত পাঁচ মাস আগে মেয়েকে নিয়ে আসতে চাইলে গৃহকর্তা মোঃ সোহেল এবং তার স্ত্রী নানান অজুহাতে মেয়েকে ফেরত দেয়নি। কয়েকবার ফোন রিসিভ করলেও মেয়েকে ফোনে কথা বলতে দিতনা। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরতনা”, বলেন বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় বসবাস করা ইয়াসিন।
“আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর পর্যন্ত ওরা আমাকে দেয়নি। রাত প্রায় আটটার দিকে আমার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে মেয়ের খবর জানতে পারি”, বলছিলেন তিনি।
“লিফটের ভেতরে কিভাবে লাশ পড়ে থাকে। আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই”, বলছিলেন বাবা ইয়াসিন।
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের পঞ্চম তলায় সোহেলের পরিবার বসবাস করে বলে জানায় পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় লিফটের ভেতর থেকে শিশু সাবেকুন নাহারের লাশ উদ্ধার করে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বান্দরবান সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রেজা সারোয়ার।
“লিফটের দারোয়ান নুরুল আমিনও লিফটের ভেতরে সেসময় আটক অবস্থায় ছিল। পরবর্তিতে ফায়ার সার্ভিস এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লিফট ভেঙ্গে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে”, বলেন তিনি।
“লিফটের ভেতরে কিভাবে লাশ এল সেটি এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট না। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি”, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা রেজা সারওয়ার।
গতকাল শুক্রবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত হয় বলে জানান তিন সদস্য বিশিষ্ট ময়না তদন্তকারী দলের একজন ডাঃ বোরহান উদ্দিন।
“সাবেকুন নাহারের মাথায়, কপালে, পিঠে, হাতে এবং পায়ে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন ছিল”, বলেন ডাঃ বোরহান।
“মৃত্যুর আগে সে কোন ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আমরা তার ভিসেরা এবং সোয়াব নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি”, বলেন তিনি।
একাধিকবার চেষ্টা করেও সোহেলের ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বান্দরবান সদর থানার ওসি তদন্ত মির্জা জহির বলেন “সোহেলের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি মেয়েটি বুধবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। আমরা ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছি। মেয়েটি দুর্ঘটনাবশত লিফটের গর্তে পড়ে গিয়েছিল নাকি সেখানে অন্য কোন ঘটনা ছিল আমরা সবকিছুই তদন্ত করছি।”
More Stories
বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভূমিতে কোয়ান্টামের নিরবচ্ছিন্ন দখল আক্রমণ
কেন বৌদ্ধ সমিতির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন দায়ক দায়িকারা
‘বিপুল চাকমারা হাজারো বিপ্লবী জন্ম দিয়ে গেছেন’