May 19, 2024

Always worth looking into

কেন বৌদ্ধ সমিতির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন দায়ক দায়িকারা

সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া

বাংলাদেশী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পুরনো একটি সংগঠন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি।

সম্প্রতি একুশে পদক প্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ড. জিনবোধি ভিক্ষুর ওপর হামলার প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই সমিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করছে বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সাধারণ উপাসক-উপাসিকেরা।

ড. জিনবোধি নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা বিভাগের অধ্যাপক।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, দলিল ও খতিয়ান জালিয়াতির মাধ্যমে  দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারকে নিজস্ব সম্পত্তি বলে দাবি করা , দীর্ঘ যুগ ধরে বিহারের সমস্ত দানের টাকা লোপাট,স্বর্ণের বৌদ্ধ মুর্তি চুরি, ও অর্থের বিনিময়ে ভিন্ন রাষ্ট্রকে বুদ্ধের পবিত্র কেশধাতু প্রদানসহ নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধ সমিতি দীর্ঘ দিন ধরে  নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার দখল করে রেখেছিল। বৌদ্ধ সমিতি নন্দন কানন বৌদ্ধ মন্দিরের কেউ নন বলে ইতিমধ্যে আদালত রায় দেন।”

“সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাতেও হেরে যায় বৌদ্ধ সমিতি। বর্তমানে আপীল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন দায়ের করেছে বৌদ্ধ সমিতি যা শুনানির অপেক্ষায় আছে, তিনি বলেন। 

মন্দিরের সম্পত্তি রক্ষার জন্য জিনবোধি ভিক্ষু প্রায় এক যুগ ধরে সংগ্রাম করছেন বলে জানান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

নিজেকে নিরাপত্তাহীন দাবি করে জিনবোধি বলেন, “১৮৮৯ সালে নির্মিত চট্টগ্রামের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বৌদ্ধ সমিতির লোকজন কর্তৃক মানসিক এবং শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছি। দীর্ঘ যুগ ধরে বৌদ্ধ সমিতি এই বিহার নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করে আসছে।”

তিনি বলেন, “দায়ক-দায়িকাদের দানের কয়েক কোটি টাকা সমিতির নেতারা লোপাট করেছেন। প্রায় আধা কেজি ওজনের বুদ্ধের স্বর্ণ মুর্তি  তারা চুরি করেছেন।”

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান ভিক্ষু প্রিয়রত্ন মহাথের বলেন, “বৌদ্ধ সমিতির একক সিদ্ধান্তে ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কাকে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে থাকা দুর্লভ বুদ্ধের পবিত্র কেশধাতু দেয়া হয়”।

এই বিষয়ে বৌদ্ধ সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান আদর্শ কুমার বড়য়া বলেন, “মন্দির নির্মানের জন্য শ্রীলঙ্কান সরকারের অর্থ প্রদানের আশ্বাসে আমরা বুদ্ধের ধাতু দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তারা আমাদের কোন অর্থ প্রদান করেননি।”

“এর আগে আমরা জাপান এবং থাইল্যান্ডকেও ধাতু দিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের খুব সামান্য পরিমাণ বুদ্ধের ধাতু রয়েছে”, তিনি বলেন।

বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, “আমরা কোন অর্থ আত্মসাৎ করিনি। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার পুনঃনির্মাণ ও সংস্কাররের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের পর থেকে এখনো আমরা কোন অর্থ বরাদ্দ পায়নি। বিহার নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করেছি।”

এই ব্যাপারে জানতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “চটগ্রাম বৌদ্ধবিহার নির্মাণের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ হয়েছে কিনা আমি জানিনা, এই ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলতে পারবেন।”

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয়দত্ত বড়ুয়া বলেন, “বিষয়টি আমি জানিনা। বিস্তারিত জেনে পরে আপনাকে জানানো যাবে।”

জিনবোধি ভিক্ষুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার পর গত তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হলেও এখনও অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেননি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, “বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর হামলার ঘটনা আমরা সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। সামাজিকভাবে সমাধান না হলে পরবর্তীতে আমরা আসামীদের গ্রেফতার করব।”

“জিনবোধি মহাথেরোকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে সেটি একটি ফৌজধারী অপরাধ। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অপরাধ সামাজিকভাবে সমাধানের দায়িত্ব নেয় তাহলে তারা প্রভাবিত হয়েছে” বলেন  ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

চট্টগ্রাম শহরের একজন উপাসক জীতেন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “বৌদ্ধ সমিতির সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে আমরা সত্যি মর্মাহত। অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে এটাই প্রত্যাশা।”