‘এম এন লারমা ছিলেন একজন মানব মুক্তির নেতা’

সিএইচটি ডেস্কঃ

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সমগ্র শ্রমজীবী ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। এম এন লারমা ছাত্র জীবন থেকেই মানব মুক্তির পক্ষে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। জাতীয় সংসদে পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিনিধিত্ব করার সময় তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোষিত, নিষ্পেষিত, অধিকারহারা মানুষের মুক্তির কথা ফুটে ওঠে। তিনি একজন মানব মুক্তির নেতা।

জুম্ম জাতীয় চেতনার অগ্রদূত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে এক স্মরণ সভায় বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান আরও বলেন, “এম এন লারমার শুরু করা আন্দোলনকে সফল করতে গেলে বাংলাদেশের অপরাপর যে সমস্ত মানুষ আদিবাসীদের অধিকারে বিশ্বাস করে তাদেরকে এই আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। লারমাকে জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচিত করতে গেলে দেশের প্রগতিশীল সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে সামিল থেকে এম এন লারমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”

“সকল প্রকার বিভেদ ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হোন” স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত স্মরণ সভাটি শুক্রবার নগরের নন্দনকাননের এ কে খান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি শ্রী তাপস হোড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক বসুমিত্র চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা এস জে চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি অমর কৃষ্ণ চাকমা, পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা ও চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামিও মারমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নরেশ চাকমা।

স্মরণ সভার শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বীর শহীদদের প্রতি শোক প্রস্তাবনা পাঠ করেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অম্লান চাকমা। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দের এম এন লারমা প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে আয়োজিত স্মরণ সভাটি শুরু হয়।

তাপস হোড় বলেন, “এম এন লারমা তার কর্ম ও আদর্শ দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে গিয়েছেন। তাঁর সে আদর্শকে শোষিত, নিপীড়ন ও অধিকারহারা মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। আমাদের তরুণদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে। লড়াই সংগ্রাম ছাড়া পৃথিবীতে কোন জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকেনি। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তরুণদেরকেই অধিকতর সামিল হতে হবে। এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে পাহাড়ের অধিকারহীন মানুষের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

আলোচকরা বলেন, ঘুণে ধরা সামন্তীয় পশ্চাৎপদ সমাজকে জাগ্রত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য এম এন লারমা সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের নেতা ছিলেন না তিনি সমগ্র বাংলাদেশের মেহনতি নির্যাতিত, শোষিত মানুষের নেতা অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের সামগ্রিক বাস্তবতা এমন পর্যায়ে গেছে যে সেখানে জুম্মদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আমরা আশা করেছিলাম পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক সমস্যা শান্তিপূর্ণ সমাধান আসবে। কিন্তু সরকার দীর্ঘ পঁচিশ বছরেও এ চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক না হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি দিনদিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের তরুণ সমাজকে এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামিল হওয়া সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত আলোচকরা।