সিএইসটি ডেস্কঃ
আমার আদরের একমাত্র ভাগিনার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা কখনো দুর্ঘটনা হতে পারেনা। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ় হাসপাতালে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন মামা নিরল চাকমা আর বলছিলেন “এই রকম একটা জনসমাগমে কিভাবে লরি এসে শিশুদের চাপা দিল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী অমর শান্তি চাকমা নামে একজন জানান, “এই ঘটনার দায় প্রশাসন কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। গতকাল সাফজয়ী ফুটবলারদের রাঙ্গামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অভ্যর্থনার অনুষ্টানে যাওয়ার আগে অন্যদের মত আট বছরের শিশু লিটন চাকমাও চৌমুহনী এলাকায় দাঁড়িয়েছিলেন।”
লিটন আরটিএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনির শিক্ষার্থী ছিল বলে জানান মামা নিরল।
একমাত্র সন্তানের এমন মৃত্যুতে বাবা সাধন প্রিয় চাকমা বারবার আর্তনাদ করছিলেন আর বলছিলেন “তোমরা আমার সন্তানকে এনে দাও। আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।ওরা আমার আদরের ধনকে কেড়ে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সাফজয়ী দলের পাহাড়ের পাঁচ কন্যাদের গ্রান্ড রিসেপশন দেওয়ার আয়োজন করে বলে জানান ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্রা দেওয়ান।
“এমন মৃত্যু কোনভাবেই মানা যায় না। এটা খুবই মর্মান্তিক”,বলেন চন্দ্রা দেওয়ান।
তিনি বলেন, সাফজয়ী দলের পাহাড়ের পাঁচ কন্যা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল রাঙামাটি চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌমুহনী এলাকায় তাদের বরণ করে নিতে আমাদের স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।”
“কিন্তু আমরা ভাবতে পারিনি হঠাৎ সেখানে এতোবেশি লোকসমাগম হবে। এই ঘটনায় আমরা খুব ব্যাথিত”, প্রধান শিক্ষিকা বলেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আলীর সাথে শুক্রবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমাদেরকে জানানো হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে একটা র্যালি করে সাফ জয়ীদের রিসিভ করে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখানে দীর্ঘ সময় ধরে লোকজন থাকার ব্যাপারে আমাদের জানা ছিল না।”
এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ওসি বলেন, “ এই ঘটনায় তদন্তের প্রয়োজন আছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।“
লরি ড্রাইভার সোহেল শেখকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেছেন বলে জানান ওসি।
“ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছিল শুধুমাত্র সেই স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা সাফজয়ী এই নারীদের স্কুল চত্বরে অভ্যর্থনা দিবেন। রাস্তায় তারা র্যালি করবেন সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানাননি”, বলেন কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)নাজমুন আরা সুলতানা।
“পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া এতগুলো বাচ্চা নিয়ে রাস্তার উপর র্যালি করা এটা স্কুল কর্তৃপক্ষের মোটেও উচিত হয়নি”, বলেন ইউএনও।
প্রত্যক্ষদর্শী অমর শান্তি জানান,এই ঘটনায় আরও তিন শিশু আহত হয়।
রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার ডাঃ শওকত আকবর হোসেন বলেন, “গতকাল কাউখালী থেকে সকালে চারজন শিশুকে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে একজনের শারিরীক অবস্থা খুব খারাপ থাকায় থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।“
বাকি তিনজন শিশু বিপদমুক্ত আছেন বলে জানান ডাঃ শওকত।
অমর শান্তি জানান, “সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজে নিয়োজিত লরিটি হঠাৎ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা চার শিশু আহত হয়।”
এই বিষয়ে জানতে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনুর সালেহীনকে ফোন দিলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
More Stories
বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভূমিতে কোয়ান্টামের নিরবচ্ছিন্ন দখল আক্রমণ
কেন বৌদ্ধ সমিতির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন দায়ক দায়িকারা
‘বিপুল চাকমারা হাজারো বিপ্লবী জন্ম দিয়ে গেছেন’