সিএইসটি ডেস্কঃ
লেখাপড়া শেষ করে আমার বোন পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল। পরিবারের মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে থেকেও আমরা দুবোন পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।
“ধারণা করছি আমার বোনকে ধর্ষণ করে মেরা ফেলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হল প্রেম ঘটিত কারণে আমার বোন আত্মহত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই”, বারবার আর্তনাদ করে বলছিলেন এনুছাই মারমার বড় বোন হলাসিংছাই মারমা।
আমি আর আমার ছোট বোন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয়ের আশ্রমে থাকতাম। আমি একাদশ শ্রেণিতে আর আমার বোন নবম শ্রেণিতে পড়ত, বলেন হলাসিংছাই।
“গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে আমাকে জানানো হল আমার বোন আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় আমার বোনের নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল, তার ডান হাতে, মুখে এবং চোখে দাগ ছিল। রুমের মেঝেতেও রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিল”, বলেন বড় বোন।
“আমার বোনের হাতের মাঝখানে লেখা ছিল E+V. কিন্তু আমার বোনের নামের প্রথম অক্ষর A দিয়ে লিখত। ভান্তে প্রতি শুক্রবার ঘটনাস্থল এলাকাটি পরিষ্কার করার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠায়। কিন্তু সেদিন ছিল বুধবার”, তিনি বলেন।
“ঘটনাটি দামাচাপা দেয়ার জন্য আশ্রম কর্তৃপক্ষ সেদিন আমাকে এবং আমার বাবা-মাকে পুলিশের সামনে বলতে বাধ্য করেছিল এই ঘটনায় আমরা কোন বিচার চাইনা। তারা এমনকি আমার বোনের ময়না তদন্ত পর্যন্ত না করার জন্য আমাদেরকে চাপ দিয়েছিল”, যোগ করেন বোন হলাসিংছাই।
“আমি গরিব জুম চাষী। মেয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। আমার সামর্থ ছিলনা বলেই তাদেরকে আশ্রমে রেখে পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। কিন্তু তারা আমার আদরের সন্তানকে মেরে ফেলল””, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন বাবা অংচাইসা মারমা।
অংচাইসা রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলি উপজেলার পশ্চিম তাইতং পাড়ায় বাসিন্দা বলে জানান।
“২১ তারিখ দুপুরে আমরা অনাথালয়ের চার তলার একটা রুম থেক এনুছাই মারমার লাশ উদ্ধার করি। সে সময় তার নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল। পরেরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়না তদন্ত হয়”, বলেন রাউজান থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ইলিয়াস মাহমুদ।
এই বিষয়ে জানতে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। বিস্তারিত ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসার পর বলা যাবে।”
“২১ তারিখ লাশ উদ্ধার করলেও কেন ২২ তারিখ লাশের ময়না তদন্ত করা হল জানতে চাইলে তিনি বলেন এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবনা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলতে পারবেন”, তিনি বলেন।
পরবর্তীতে এই বিষয়ে জানতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইলিয়াসকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়না তদন্তকারী টিমের একজন জানান, “লাশটি দেরি করে আনাতে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।”
“ক্লাসে এনুছাই খুব নম্র এবং ভদ্র ছিল। ২০ তারিখেও সে স্কুলে ক্লাস করেছিল। আত্মহত্যা করার মত কোন কিছুই আমাদের চোখে পরেনি”, বলেন অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয় উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উদয়শ্রী বড়ুয়া।
অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয়ের পরিচালক সুমিতানন্দ থের, ৪৮ বলেন, “প্রেমঘটিত কারণেই এনুছাই মারা গেছে। তার হাতে এই সংক্রান্ত লেখা ছিল।“
পরিবারের দাবি এনুছাই তার নাম A দিয়ে লিখত জানালে সুমিতানন্দ দাবি করেন “ইংলিশে লিখলে তার নামের প্রথম অক্ষর E দিয়েই হবে।”
ঘটনাস্থল এলাকাটি পরিষ্কার করার জন্য শিক্ষার্থীদের শুক্রবারের পরিবর্তে কেন বুধবার পাঠানো হল জানতে চাইলে তিনি বলেন “এটা ঠিক যে পানির টাঙ্কি পরিষ্কার করার জন্য শুক্রবারেই তাদেরকে সেখানে পাঠায়। কিন্ত পাইপ মিস্ত্রির ব্যক্তিগত কাজ থাকার কারণে দিনটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে সেদিন আশ্রমের অন্য শিক্ষার্থীরাও থাকে না পেয়ে খোঁজা-খুঁজি করছিল ।”
ঘটনার পর থেকে বিচার না চাওয়ার জন্য এনুছাই মারমার পরিবারকে অসহযোগিতার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এই ব্যাপারে জানতে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুস সামাদ শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান “আমাদেরকে জানানো হয়েছিল ঘটনাটি একটি আত্মহত্যা ছিল। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যদি আমাদের কাছে আসে অবশ্যই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখব।”
More Stories
বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভূমিতে কোয়ান্টামের নিরবচ্ছিন্ন দখল আক্রমণ
কেন বৌদ্ধ সমিতির প্রতি আস্থা হারিয়েছেন দায়ক দায়িকারা
‘বিপুল চাকমারা হাজারো বিপ্লবী জন্ম দিয়ে গেছেন’