November 23, 2024

Always worth looking into

ম্রো এবং ত্রিপুরাদের প্রতি চরম এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়

সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া

তাদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেয়া হল। খাবার পানির উৎস  ঝিঁড়িতে বিষ প্রয়োগ করা হল, সৃজিত কলা বাগান কেটে দেয়া হল। সর্বশেষ তাদের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ , লুন্ঠন এবং ভাঙচুর করা হল।

সোমবার ভোর রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে হামলার সময় পাড়ার নারী-পুরুষ ও শিশুরা পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হামলাকারীরা লুঠ করে নিয়ে গেছেন বলে জানান রেংয়েন পাড়ার কারবারি রেংয়েন ম্রো।

“লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি আমাদের জুম ভূমি দখলের জন্য রাতের গভীরে প্রায় সাতটি ট্রাকে করে সেটেলার বাঙ্গালী এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে প্রথমে আমাদের বাড়িতে লুটপাট করেছে, এরপর তিনটি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, আর তিনটি ভাঙচুর করেছে। আমাদের সর্বস্বান্ত করেছে”, বলেন রেংয়েন।

“আমাদের উপর ক্রমাগত এমন নিষ্ঠুরতার পরেও সরকার পাশে এসে আমাদের রক্ষা করছে না। আমরা কি এই দেশের নাগরিক নয়?”, তিনি বলেন।

“চরম এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়। পাড়ার সবাই খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বাইরের মানুষ দেখলে ভয় পাচ্ছেন। নিজেদের জুম ভুমি রক্ষার জন্য কি আমাদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হবে?” বলেন কারবারি রেংয়েন।

“জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে শুরু করে তারা আমার ঘরের সব কিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘরে দুমাসের চাল মজুদ ছিল। পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। জানিনা কিভাবে এই শীতের রাতে ছোট শিশুদের নিয়ে পাহাড়ে টিকে থাকব”, আর্তনাদ করে বলছিলেন দু সন্তানের জননী বিধবা চাম রুম ম্রো।

ক্ষতিগ্রস্থ আর একজন রেংয়ুং ম্রো বলেন, “লামা রাবার কোম্পানীর লোকেরা এর আগে আমার কলা বাগান কেটে দিয়েছিল। আমাদের উচ্ছেদ করার জন্য এবার বাড়ি পুড়িয়ে দিল। বারবার আমাদের উপর নির্যাতন করলেও সরকার আমাদের রক্ষা করছেন না।”

গত ২৭ এপ্রিল বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র কারবারী পাড়া ও রেংয়েন কারবারী পাড়ার সৃজিত জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আগুনে প্রায় একশ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে যায়। জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানীর লোকজন তাদের ফসলে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগিয়েছিল বলেন লাংকম পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো।

পরবর্তীতে, এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি লীজ বাতিলসহ ৬ দফা সুপারিশ দিলেও তা কার্যকর করা হয়নি। বরং গত ৬ সেপ্টেম্বর,  পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ী ঝিঁড়ির পানিতে বিষ মেশানো হয়, বলেন তিনি।

কোম্পানীর লোকেরা  গত ১ সেপ্টেম্বর লাংকম ম্রোসহ ম্রো সম্প্রদায়ের চারজনের চাষকৃত ক্ষেত থেকে ২৫ মণের অধিক মিষ্টি কুমড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর রেং ইয়ুং ম্রোর বাগানে রোপণ করা ৩০০ টি কলাগাছ কেটে দেয়  বলেন কারবারি লাংকম ম্রো।

“আমরা থানায় মামলা পর্যন্ত করতে ভয় পায়, কারণ পুলিশ বা প্রশাসন এতোগুলো ঘটনার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বেশ তৎপরতা দেখালেও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা, যোগ করেন তিনি।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের মো: কামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা কারো ঘরে আগুন লাগায়নি। তবে আমাদের জায়গা ম্রো এবং ত্রিপুরারা দখল করে রেখেছে।”