November 21, 2024

Always worth looking into

দুর্গম পাহাড়ি পথে প্রিয় লারাম সবাইকে আগলে রাখতেন

সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া

লারাম বম, অরন্যের গভীরে থেকেও সবার প্রিয় এবং পরিচিত এক নাম। যিনি তার সমস্ত  মমত্ববোধ  দিয়েই পর্যটকেদের  বুকে আগলে রাখতেন। ছিলেন দুর্গম পাহাড়ি পথের পথ প্রদর্শক।

পরম অতিথিপরায়ণ লারাম প্রাণ-প্রকৃতি সমৃদ্ধ বগা লেককে রক্ষায় বারবার মামলা-হামলার শিকার হয়েছিলেন।

স্থানীয় এক সাংবাদিকের মতে, “লারাম না থাকলে বগা লেক অনেক আগেই দখল হয়ে যেত। বান্দরবানের কিছু প্রভাবশালী সবসময় বগা লেক এলাকা দখল করতে চেষ্টা করত। লারাম সব সময় তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন।”

“২০১৬ সালের এপ্রিলে স্থানীয় প্রশাসন বগা লেকের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে বগালেক গ্রামের বম জনগোষ্ঠীর চারটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিল”,বলেন ইয়াং বম এসোসিয়েশনের সভাপতি ভান তিল্লির বম।

“বগা লেককে রক্ষায় প্রতিবাদ করলে লারামসহ বম সম্প্রদায়ের অনেকেই সেসময় মামলার শিকার হন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জেলেও যেতে হয়”, তিনি বলেন।

“পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বগালেক এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে ২০০৯ সালে স্থানীয় এম পি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক এক সদস্য সেখানে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে চাইলে বগালেক পাড়াবাসীদের প্রচন্ড বাঁধার কারণে তারা সেদিন ব্যর্থ হয়”, তিনি জানান।

বগা লেককে রক্ষায় সেদিনও লারাম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন বলে জানান সভাপতি ভান তিল্লির বম।

“পাড়াবাসীর প্রতিবাদের কারণে ২০১০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব বগালেক এলাকায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে গেলে তিনিও ফিরে আসতে বাধ্য হন”, যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন বগা লেকের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় লারাম সব সময় খুব প্রতিবাদী ছিলেন।

লারাম এবং তার পিসী সিয়াম বমের দেখিয়ে দেয়া কমিউনিটি  ট্যুরিজম এবং হোম স্টে ট্যুরিজমের পথ ধরে বান্দরবানের অরণ্যে পর্যটন শিল্পে অনেকেই সফল হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

“লারাম তো কোনদিন কারো ক্ষতি করেননি। কেন নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হল। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই গভীরভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। কিন্তু তাকে এভাবে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে তা আমরা কোনদিন চিন্তাও করিনি”, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন লারামের স্ত্রী নুজিং বম।

লারামের বড় ছেলে ভারতে আর ছোট দুই ছেলে ঢাকায় পড়ালেখা করে জানিয়ে তিনি বলেন,“বড় ছেলেকে জানালেও এখনও ছোট দুই ছেলেকে তাদের বাবার মৃত্যুর খবর জানায়নি।”

আমার ভাই অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। কারা আমার ভাইকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে তা বলতেও আমরা সাহস পাচ্ছিনা”, বলেন লারামের ছোট ভাই কিম বম।

“লারামের হত্যার বিচার কিভাবে চাইব।ভয়ে আমি মামলাও করতে চাইনি। পুলিশ আমাকে দিয়ে জ়োড় করে মামলা করিয়েছে”, বলেন স্ত্রী নুজিং বম।

প্রিয় লারামের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শোক এবং বিচার চেয়েছেন।

মোকাম্মেল হক নামে একজন লিখেন, যে খুন হয়েছে বা মারা গেছে তার সাথে রক্তের বা আত্মিয়তার কোনো সর্ম্পক নেই। তবুও বার বার মনটা ভেংগে পড়ছে। কারণ সে ছিল দুর্গম পাহাড়ি পথের পথপ্রর্দশক, অনেক ট্রেকার দলের প্রিয় “লারাম বম”। যে লারাম সবসময় বিপদসংকুল দুর্গম পাহাড়ি জনপদে আমাদের আগলে রাখত, পথ দেখাত দূর পাহাড়চূড়া জয়ের, আজ সে নিজেই প্রাণ হারাল হিংস্র দুর্বৃত্তের হাতে!

লারামের সাথে অনেক স্মৃতির কথা উল্লেখ করে মারুফ বিন আলম নামে একজন লিখেন, কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। আর এটা তো মৃত্যু নয়, রীতিমতো হত্যা। পাহাড়ের রাজনীতি দিন দিন প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে যাচ্ছে।  লারাম বমের সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৮ সালে বগালেকে। সে বছরই প্রথমবার ঢাকা এসে লারাম বম আমার বাসাতেই কয়েকদিন ছিলো। এরপর যতোবারই বগালেক, কেওক্রাডং, পুকুরপাড়া, জাদিপাই ঝরনা গিয়েছি ততোবারই বগালেকে লারামের বাসায় উঠেছি। লারামের সাথে আমার শেষ দেখা বেশ কয়েকবছর আগে ২০১৬ সালে। কিন্তু যোগাযোগ ছিলো তার সাথে।

এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে মেহেদি হক নামে একজন লিখেন, লারাম আর নেই! বান্দরবানের কেএনএফ জঙ্গী গোষ্ঠীর হাতে নিহত হয়েছে। ২০০৫ এ বন্ধুরা সবাই মিলে কেওক্রাডং গিয়ে পরিচয় হয়েছিল লারামের সাথে। দারুণ গান গায়, আর ভালই মজা করতে পারে বলে আমরা ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম তার। আমি নিশ্চিত আরো অনেক পর্যটকের অনেক ভাল ভাল স্মৃতি আছে তার সাথে। এই দুঃখের সংবাদ মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

দিহান চৌধুরী নামে একজন লিখেন, Really shocked to hear. Met him 2019 at Keokradong. Bandarban is not safe anymore. Need peaceful resolve regarding this situation. Sad these beautiful places are getting more riskier to visit due to political and extremism issue.

ফজলে রাব্বি মুন নামে একজন লিখেন, I went to Bandarban many times. But my stay at Laram’s resthouse in Boga Lake in 2010 with some of my closest friends is always a special for me. It was very first visit for me at the hill tracts when I first got to fall in love with the district, its nature and people. I can still remember and recall most of that tour. And, just a few hours ago, I came to know that the lifeless body of the great Laram Bom has been found today somewhere in the nature where he guided thousands of tourists over the last couple of decades with his smile and hospitality. For last few months, I was wanting to visit Boga Lake and his place but couldn’t able to make the plan into reality. Not sure if I want to visit there anymore. May his soul rest in peace and hope his family gets justice.